যৌথ পরিবারে হোক শিশুর বেড়ে ওঠা- সেরা ৫ টি উপকার
শিশুর প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হল তার নিজের পরিবার। কেননা একটি শিশু পরিবারে জন্ম নেয় এবং জীবনের প্রথম ৫ টি বছর শুধু মাত্র পরিবারেই মধ্যেই বিচরণ করে। পরিবারই হচ্ছে শিশুর প্রথম বিদ্যাপীঠ। আ র মা-বাবার কাছেই শিশুর শিক্ষা-দীক্ষা শুরু। মূলত শিশুরা বাবা-মা’র কাছেই লেখাপড়া, নৈতিকতা, আদর্শ বা দেশপ্রেম সম্পর্কে জানতে শুরু করে। তাই মা-বাবাই হচ্ছেন শিশুর প্রথম আদর্শ শিক্ষক। কিংবা মা-বাবাকেই শিশুরা তাদের প্রথম আদর্শ গুরু হিসেবে মানতে শুরু করে। আর সে কারণে শিশুর বেড়ে ওঠায় মা-বাবার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বা প্রয়োজন।শিশুর জন্মের পর শারীরিক ,মানসিক , প্রক্ষোভিক, সামাজিক প্রভৃতি বিকাশগুলি ঘটতে শুরু করে ।
মানুষের দ্রুততম বিকাশ হয় শৈশবের শুরুতে। জন্মের পর থেকে আট বছর বয়স পর্যন্ত থাকে বিকাশের এই পর্ব।ছয় মাসের মধ্যেই মানুষের মস্তিষ্কের অর্ধেক গঠিত হয়ে যায় এবং আট বছরের মধ্যে তৈরি হয় ৯০ শতাংশ। শিশুর বুদ্ধিবৃত্তি, আবেগ, সামাজিক যোগাযোগ ও শারীরিক সম্ভাবনা বিকাশের জন্য এই পর্যায় ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।সে কারণে জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুর অভিজ্ঞতা তার সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা রাখে। কারণ সেগুলোকে ঘিরেই তার মস্তিষ্ক বিকশিত হয়। এ সময়টায় শিশুর মস্তিস্ক নমনীয় থাকে এবং দ্রুত বিকশিত হয়। শিশুর ভালো ও খারাপ অভিজ্ঞতাগুলো মস্তিস্কের বৃদ্ধির ওপর কড়া প্রভাব ফেলে । এই সময়ে অবহেলা বা নির্যাতন শিশুর বুদ্ধিবৃত্তি, আচরণ ও আবেগের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করে।
শিশুকে ছোটবেলা থেকেই পূর্ণ মানসিকতার সুষম বিকাশ ঘটানো যায় তবে ভবিষ্যৎ জীবনে শিশু নানারকম মানসিক সমস্যার মোকাবিলা করে একজন সুস্থ সবল সামাজিক মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। আর এই মানসিক দিকগুলো গড়ে উঠতে পারে একমাত্র পরিবারের মধ্যেকার পরিবেশে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিশু
বর্তমান যুগে সোশ্যাল মিডিয়া ,যন্ত্র নির্ভরতা ও পারস্পরিক সুসম্পর্কের অভাব প্রভৃতির ফলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক ভাবের আদান প্রদান কমে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে সুকোমল শিশুদের মনে । ফলে শিশুরা নানাভাবেই বিকৃত মানসিকতার শিকার হচ্ছে এবং মোবাইল গেম , ভিডিও গেমে আসক্তি , অসামাজিক ভাবনা , , অসামাজিক ভাবনা , নেশার প্রতি আসক্তি ইত্যাদির কবলে পরে যায়। এসব অনেক সময় বাইরের থেকে শিশুকে দেখে বোঝা যায় না। কিংবা বোঝা গেলেও অনেকেই বিশেষ আমল দেন না। কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার যেমন শরীরকে সুস্থ রাখে তেমনি উপযুক্ত পারিবারিক পরিবেশ -ই শিশুর মানসিক গঠনকে সুন্দর করে তোলে।
আবার অন্যদিকে যুগের চাহিদায় যৌথ পরিবার ভেঙ্গে গড়ে উঠছে একক পরিবার ।সেই একক পরিবারে সংসারের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই চাকরি করতে হচ্ছে। যার ফলে বাড়িতে থাকা ছোট শিশুর লালন-পালনের ভার পড়ছে গৃহপরিচারিকার ওপর। এতে শিশুর অযত্ন আর অবহেলার সুযোগ থাকে। আবার মা চাকরি ছেড়ে বাড়িতে থাকলেও সমাধান হচ্ছে না।পড়তে হচ্ছে আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি ।
এক গবেষণায় দেখা যায় শিশু গৃহপরিচারিকার পরিচর্যায় বড় হলে নানা অনৈতিক কাজে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মাদকাসক্ত হতে ,ভুগতে পারে নানা মানুষিক জটিলতায়ও । এ ছাড়া শিশুর খাওয়াদাওয়া ও স্বাস্থ্যের বিষয়টিও প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে থাকে। অভিভাবক ছাড়া শিশু একাকিত্বর মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে, যা তার মানসিক বিকাশে ক্ষতি করে। সত্যি বলতে এই একাকী নিঃসঙ্গ শিশুরা তাদের শিশুসুলভ সারল্য হারিয়ে ফেলে। কৃত্রিম ও অসামাজিক হয়ে ওঠে।এ ক্ষেত্রে যৌথ পরিবার শিশুর বিকাশে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
যৌথ পরিবারে হোক শিশুর বেড়ে ওঠা - শিশুর বিকাশে যৌথ পরিবার
যৌথ পরিবারে হোক শিশুর বেড়ে ওঠা - শিশুর বিকাশে যৌথ পরিবার একে অপরের পরিপূরক . শিশুর যথোপযুক্ত বিকাশে যৌথ পরিবার রাখতে পারে বড় ভুমিকা। এক্ষেত্রে যৌথ পরিবারের বড় অবদান হলো, এসব পরিবারে বেড়ে ওঠা শিশুরা অনেকের আদর-ভালোবাসা পেতে অভ্যস্ত হয়। পরিবারের সবার কাছ থেকে স্নেহ-ভালোবাসা, মায়া-মমতা, শিক্ষাদীক্ষা পায়। এতে শিশুর মনে সহমর্মিতা, আদব-কায়দা, গুরুজনদের মান্য করা এবং শিষ্টাচার বোধ গড়ে ওঠে। এ ছাড়া অবসরপ্রাপ্ত দাদি-দাদা, নানি-নানা তাদের নানা কাজে সাহায্য করে। যেমন—স্কুল থেকে আনা-নেওয়া, হোমওয়ার্ক করানো, বেড়াতে নেওয়া, রূপকথার গল্প শোনানো। এসব তার মানসিক বিকাশে সহায়তা করে। আরেকটি দিক হলো, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিভিন্ন পেশার মানুষ থাকে। সকালে নাশতার টেবিলে কিংবা রাতে খাবার টেবিলে সবাই নিজ নিজ গল্প করে। এতে শিশুর জ্ঞানজগত্ শিশুকালেই সমৃদ্ধ হয়। যৌথ পরিবার সমবায়ের জায়গা থেকে আর্থিক সুবিধা পায়। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আর্থিক জীবনযাত্রার মান তারতম্য হলে অপেক্ষাকৃত সচ্ছল ব্যক্তি সহজেই সমতা আনেন বা আনতে পারেন।
এটি ঠিক যে পুরনো প্রথাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার কিছু নেই। সেটি ভাবাও ঠিক না। তবে নতুন এক সহায়ক ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবলে কিন্তু মন্দ হয় না। বর্তমান যৌথ পরিবার আগের মতো বিশাল নয়। এটা ছোট পরিবারের বর্ধিত রূপমাত্র। স্বামী-স্ত্রী, দুই বা এক সন্তান, শ্বশুর-শাশুড়ি, এক বা দুই দেবর-ননদ—সব মিলিয়ে সাত-আটজন। এই অল্পসংখ্যক সদস্য নিয়ে যৌথ পরিবার গড়া যেতে পারে। যেখানে এক ছাদের নিচে থাকবে তিন পুরুষ। সেখানে প্রবীণদের প্রয়োজন ফুরাবে না। শিশুরা পাবে সহায়ক শৈশব।