বিয়ে নিয়ে বিড়ম্বনা
বিয়ে নিয়ে আমাদের সমাজে মানুষকে অনেক বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়।অনেক ক্ষেত্রেই সামাজিক দায়বদ্ধতার খাতিরে,আত্নীয়তা রক্ষা করার জন্য বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়া জরুরি হয়ে পড়ে।আবার বিয়ে অনেক পরিবারকেই বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে।তাই বিয়ে করার ক্ষেত্রে অবশ্যই নিম্নোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে ভাবা উচিতঃ
বিয়ের পর একটি ছেলে তার মা-বাবার সাথেই থাকে অথচ মেয়েকে তার বাবা-মা থেকে পৃথক থাকতে হয়। এটা কি ন্যায় সঙ্গত?
বিয়ের পর ছেলেকে মেয়ের বাসায় থাকতে হবে, নয়তো মেয়েকে ছেলের বাসায় থাকতে হবে। মেয়ের বাসায় যদি ছেলে থাকে তাহলে ছেলের ভরণপোষণের দায়িত্ব মেয়েকে নিতে হবে।ছেলেকে তখন হতে হবে ঘর জামাই।
আমাদের সমাজে একটি ছেলে একটি মেয়েকে বিয়ে করে স্বভাবতই তার ভরণপোষণের সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে। এজন্য বিয়ের পর মেয়েকে ছেলের বাড়িতে যেতে হচ্ছে। আবার দেখুন উপজাতিদের মধ্যে উল্টো নিয়ম। সেখানে বিয়ের পর ছেলেরা মেয়ের বাড়ি যায়। কারণ ছেলের ভরণপোষণের দায়িত্ব মেয়ের। অর্থাৎ সমাজে যে রেওয়াজ সেভাবেই যাওয়া-আসা হয়।
আবার দেখা যায় অনেক মেয়েরা স্বামীর বাড়িতে আসার পরে বাবা-মার থেকে আলাদা হতে চাই। তারা চায় না সংঘবদ্ধ ফ্যামিলিতে বাস করতে। ভাই বোন এদের সাথে থাকতে অনেক মেয়ে স্বাভাবিক বোধ করে না। বেশিরভাগ মেয়েই বিয়ের পরে ছোট ফ্যামিলি আশা করে। সেখানে শুধু তার স্বামী থাকবে সে থাকবে এবং তার বাচ্চাকাচ্চা থাকবে। এক্ষেত্রে দেখা যায় ছেলের বাবা মা বিড়ম্বনায় পড়েন। কারণ যে ছেলেকে সে এতদিন ধরে মানুষ করল,ভরণপোষণ করে তাকে বিয়ে করালো, সে যদি তার বাবা-মাকে বৃদ্ধ বয়সে ছেড়ে দেয় তাহলে তারা ঐ সময়ে কিভাবে থাকবে?বাস্তবতা হল, সমাজে এরকম হরহামেশাই হচ্ছে।
বিয়েতে উপহার দেওয়া নেওয়া এক ধরনের বিড়ম্বনা।উপহার না দিলে সমাজ কি মনে করে সেটা নিয়ে অনেকে বিড়ম্বনায় থাকেন।
এই সামাজিক উপহার কে বর্জন করা উচিত। এখন বিয়েতে কোন উপহার দেয়া এবং কোনো উপহার প্রত্যাশা তেমন একটা কেউ করে না। অনেকেই বিভিন্ন বিয়ের অনুষ্ঠানে যান কোন রকম কোন রকম উপহার না নিয়ে।অনেকেই আবার বিয়ের অনুষ্ঠানে তৃপ্তিসহকারে খান, প্রাণভরে দোয়া করেন এবং আনন্দচিত্তে ফিরে আসেন,এটাও কিন্তু সামাজিকতা রক্ষা হল।
বিয়ের অনুষ্ঠানে গিফট ছাড়া যাওয়া যাবে না এটা বাজে ধারণা ছাড়া আর কিছুই না। এই গিফটগুলো কোন কাজ আসে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলো বন্ধ অবস্থাতেই থাকে। সেগুলো আবার কারো বিয়েতে দেওয়া হয়।এটা একটা সামাজিক অপচয়।যার আসলে কোনো প্রয়োজন নেই। এই ধরনের সামাজিক অপচয়, সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া উচিত। আশা করা যায়, এই অবস্থার পরিবর্তন ধীরে ধীরে ঘটবে।
অতএব,প্রত্যেকের উচিত তাদের আত্নীয় স্বজনদের জানিয়ে দেওয়া বিয়ের অনুষ্ঠানে গিফট নিয়ে না আসার জন্য।আবার তাদেরও উচিত তাদের অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে আগেই যেন বলে দেয় যে ভাই, গিফট আনার দরকার নেই।
আসলে এই গিফট কিনতে গিয়ে অনেক আত্মীয় স্বজনের যে দুর্দশা হয় সেটা ভাবা হয় না। দেখলে কষ্ট হয়, অথচ কী আশ্চর্য! গিফট নেওয়ার জন্য আলাদা আলাদা টেবিল থাকে সেখানে আবার লেখা থাকে কে কে কি গিফট দিলো, এটা যখন খোলা হয় তখন এগুলো নিয়ে সমালোচনা করা হয়। আবার কোথায় কি দেওয়া উচিত সেটাও লিখে রাখা হয়,এটা আসলেই এক বিড়ম্বনা।