সম্পর্কে বন্ধুত্ব!
সাধারণত, স্কুলজীবনে আমাদের অনেক বন্ধু থাকে। কলেজে পড়ার সময়ে অনেকের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটা আরও বেড়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে ভর্তি হলে তো কথাই নেই। নতুন এক পরিবেশে অনেক মানুষের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অন্যদিকে আমাদের মা–বাবাও হতে পারেন বন্ধুর মতো। এমনটা হলে তো আমরা তাদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতেই পারি।
আবার সংসার জীবনেও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা বন্ধুর মতো হলে ভালোই হয়। তখন তাঁদের মতামতেও মিল থাকবে। এর ফলে বিবাহবিচ্ছেদও কমে যেতে পারে। এমনকি শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্কে বন্ধুত্ব থাকলে তা শেখার প্রক্রিয়াকেও সাবলীল করে। এ যেন বন্ধুত্বপূর্ণ এক পরিবেশে জীবন কাটানো।
বন্ধুত্ব মানেই তো একে অপরের মনের মিল থাকা। একজনের সঙ্গে অন্যজনের আগ্রহ বা চিন্তার মিল থাকবে। আবার সুখ-দুঃখ, বিপদ-আপদে একে অন্যের পাশে থাকার চেষ্টা করবে। কিন্তু বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সব সময় এক রকম না–ও থাকতে পারে। সেটা ভালো কিংবা মন্দ হতে পারে। যেকোনো সম্পর্ক খারাপ হলে সেটা চালিয়ে নেওয়া তো খুবই কষ্টকর।
তবে আমাদের সম্পর্ক ভালো রাখতে কিন্তু বন্ধুত্ব অনেক বড় ভূমিকা রাখে। যেমন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় বসলে আমাদের অনেক দুঃখই ভুলে থাকা যায়। আবার গল্পের ছলেও অনেক ভালো আইডিয়া চলে আসে। জীবনের অনেক কঠিন সমস্যার ভালো সমাধানও বেরিয়ে আসতে পারে। ধরা যাক, পরীক্ষার আগের রাতে নোট করা কিংবা একসঙ্গে পড়াশোনা করা। এটাই তো হলো বন্ধুত্ব। তা ছাড়া আমাদের আত্মার সম্পর্ক থাকে একমাত্র বন্ধুত্বে। এমন বন্ধুদের আমরা কখনোই হারাতে চাই না। কিন্তু উপায়?
আমরা প্রত্যেকেই আলাদা মানুষ। তাই একটা বিষয়কে আমরা একেকজন একেকভাবে দেখি, ব্যাখ্যা করি। কিন্তু আমাদের সম্পর্কগুলোও টিকিয়ে রাখতে হবে।
প্রথমত আমাদের নিজেদের আচরণের দিকে একটু বেশি খেয়াল রাখা যায়। এ ছাড়া কিছু আচরণ আমরা বদলাতেই পারি। আমরা বন্ধুত্ব বলতে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যকার সম্পর্ককেই বুঝিয়ে থাকি। তাই একজন ভুল করলে অপরজনকে ভুলটা ধরিয়ে দিতে হবে। আবার বন্ধুর ভুলগুলো সংশোধন করতে পাশে থাকাটাও জরুরি। এভাবেই তো বন্ধুত্ব দীর্ঘস্থায়ী করা যায়।
দ্বিতীয়ত অবশ্যই যেখানে শর্ত কম থাকে সেটাই বন্ধুত্ব। কোনো সম্পর্কে বন্ধুত্ব থাকলে সেখানে লাভ-ক্ষতির হিসাবনিকাশ করা যাবে না। এ ছাড়া বন্ধুর যেকোনো প্রয়োজনে তাকে ভরসা দিয়ে পাশে থাকা যায়। বিশেষ করে খারাপ পরিস্থিতি এলে বন্ধুকে একা ফেলে তো যাওয়াই যাবে না।
সর্বোপরি, ক্ষমা করে দেওয়ার সুযোগ বন্ধুত্বকে আরও মজবুত করে। বন্ধুদের বেশি ভুল ধরা যাবে না। আবার ভুল–বোঝাবুঝি হলে একে অন্যকে ক্ষমা করার প্রবণতা বাড়াতে হবে। এখানে ক্ষমা করার প্রবণতা যত প্রবল হবে, বন্ধুত্ব টিকে থাকার সম্ভাবনা তত বেশি থাকবে। যেমন একজন সহকর্মী সব সময় ভালো কাজ করে। হুট করে একদিন একটা ভুল করে বসল। তখন সেটাকে বড় করে না দেখা; বরং বন্ধুসুলভ মনোভাব নিয়ে সেটাকে শোধরানোর সুযোগ দিতে হবে। যখন এ ধরনের মনোভাবের মাত্রা বেশি থাকবে, কেবল তখনই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে স্থায়ী করা সম্ভব হয়।
 
                                 
                            